ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার – মানুষের শরীরের হাড়, দাঁত এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হিসেবে কাজ করে থাকে। ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র হাড়ের শক্তি বজায় রাখে না, বরং এটি স্নায়ু, পেশির সংকোচন ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যার মোকাবেলা করে থাকে। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত ভোজন রশিক। তাই আমাদের মধ্যে খাদ্যের বিষয় সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নেই বললেই চলে।
তবে ধীরে ধীরে বর্তমান বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্যের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা সম্ভব। তাই আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার সম্পর্কে সকল তথ্য।
শরীরে ক্যালসিয়াম কেন জরুরি?
শরীরের প্রায় ৯৯% ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতে জমা হয়ে থাকে। বাকি ১% রক্ত পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুতে উপস্থিত থাকে। হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়) প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়াও, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থকার কারণে হার্টের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা মানুষের শরীরের ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাড়ের সমস্যার কারণে বাইরের দেশে ডাক্তার দেখাতে পাড়ি জমাচ্ছে। সব শ্রেণী পেশার মানুষের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। তাই ঘরোয়া উপারে কিভাবে আপনার শরীরের ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। সেই বিষয় সম্পর্কে নিচের কয়েকটি পয়েন্ট দেওয়া হলো। আশা করি এগুলো আপনাদের খুব কাজে দিবে।
১. দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির এই সকল খাবারে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়াও দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্ঠিজাত উপাদান রয়েছে, যেমন প্রোটিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন A, D এবং B12। প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ পান করলে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। দুগ্ধজাত খাবার মানুষের শরীরের হাঁড় সুস্থ রাখার পাশাপাশি হৃদরোগের ও ডায়াবেটিস ঝুকিও কমিয়ে দেয়।
২. সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কেল, সরিষার শাক, ওকড়া, মটরশুটি এবং ব্রোকলি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। উদাহরণস্বরূপ, এক কাপ পালং শাকে প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন A ও C এবং ফোলেট। যা মানুষের শরীরের জন্য উপকারী। তাই ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে থাকে প্রতিদিন বেশি বেশি করে সবুজ শাকসবজি খেতে।
৩. মাছ: ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এর মধ্যে মাছ হলো অন্যতম। বিশেষ করে ছোট মাছ খাওয়া শরীরের জন্য বিশাল উপকারী। ইলিশ, রুই, আইর মাছ, ইত্যাদি। তবে মাছে রয়েছে প্রোটিন ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, যাতে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে। ফলে মানবদেহের জন্য হজমশক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
৪. বাদাম এবং বীজ: আমন্ড, তিল, এবং চিয়া বীজ ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এক চা-চামচ চিয়া বীজে প্রায় ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে আমন্ডে প্রতি ১০০ গ্রামে ২২৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। অন্যদিকে বাদামে রয়েছে ভিটামিন E, ফ্যাট, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার। যা শরীরকে ফিট রাখতে সহায়তা করে।
৫. ফল: পেঁপে, কমলালেবু, আনারস, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, লিচু এবং শুকনা ডুমুর এই সকল ফলে ক্যাশিয়ামে পরিপূর্ণ। ফোর্টিফায়েড অরেঞ্জ জুস শরীরের জন্য অন্যতম। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু পরিমাণে এই সকল ফল আহার করা যেকোন ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন গড়ে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তবে বয়স্কদের জন্য এই পরিমাণ ১২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও বেশি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির শরীর সুস্থ্য রাখতে সকল প্রকার ক্যালসিয়াম জাতীয় খবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। হাড় শক্তিশালী, দাঁত মজবুত, পেশীর সঠিক কার্যকারিতা, স্নায়ুর সঠিকভাবে কাজ করা এবং রক্ত জমাট বাঁধার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি। দুধ, দই, পনির (দুগ্ধজাত দ্রব্য), সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, বীজ অত্যান্ত কার্যকরী উপাদান। এছাড়াও সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ও উত্তর
১. সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার কি কি?
উত্তর: সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য:
১. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য:
- পনির: বিশেষ করে পারমেজান পনির, যা প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১,১৮৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
- দই: নিয়মিত দইয়ে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১১০-১৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- দুধ: প্রতিদিন ১ গ্লাস (প্রায় ২৪০ মি.লি.) দুধে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
২. সবুজ শাকসবজি:
- কেল: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- ব্রোকলি: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- পালং শাক: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
৩. মাছ:
- সার্ডিন: এক টিন সার্ডিনে (কাঁটাসহ) প্রায় ৩২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- সলমন মাছ: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৮১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
৪. বাদাম ও বীজ:
- তিল: ১ টেবিল চামচ তিলে প্রায় ৮৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- আমন্ড: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৬৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
- চিয়া বীজ: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
৫. ফোর্টিফায়েড খাবার:
- ফোর্টিফায়েড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল: প্রতি ৩০ গ্রামে ১০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম থাকতে পারে।
ফোর্টিফায়েড অরেঞ্জ জুস: প্রতি ২৪০ মি.লি.তে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
৬. টফু:
- ফোর্টিফায়েড টফু: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৫০-৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা ক্যালসিয়ামযুক্ত জলে তৈরি হয়।
২. ক্যালসিয়াম জাতীয় ফল কোনটি?
উত্তর: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে কমলা এবং আঙুর উল্লেখযোগ্য। যদিও ফল সাধারণত ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস নয়। কিছু ফল যেমন কমলা ও আঙুর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে, যা দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সহায়ক। এক কাপ কমলায় প্রায় ৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা অন্যান্য সাধারণ ফলের তুলনায় বেশি। এছাড়া, পেয়ারা, কিউই, এবং বেরিজাতীয় ফলেও কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে।
৩. ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ কি কি?
উত্তর: ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণগুলির মধ্যে হাড়ের দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা, দাঁতের সমস্যা, পেশির খিঁচুনি ও ব্যথা, এবং নখের ভঙ্গুরতা অন্যতম। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে অস্টিওপরোসিস, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। শিশুদের মধ্যে রিকেট দেখা দিতে পারে। ক্যালসিয়াম ঘাটতির কারণে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে এবং রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে শরীরে ক্লান্তি ও অবসাদও অনুভূত হতে পারে।
খেলাটুডের সকল প্রকার আপডেট পেতে Follow করুন খেলাটুডে গুগল নিউজ, খেলাটুডে ফেসবুক পেজ