শিরোপার দৌড়ে বার্সার বড় সুযোগ নষ্ট!

২০২৫ সালে এখনো পর্যন্ত বার্সেলোনা অপরাজিত রয়েছে। আর লা লিগায় মাত্র আটটি ম্যাচ বাকি থাকতে তারা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চার পয়েন্ট এগিয়ে থেকে সপ্তাহটা শেষ করতে যাচ্ছে। তবে শনিবার রাতে মন্টজুইকের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রিয়াল বেটিসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার ফলে লিগে টানা নয় ম্যাচের জয়ের রেকর্ডটা থেমে গেছে।

পুরো ম্যাচজুড়েই বার্সেলোনা দাপট দেখিয়েছে। ভালো কিছু সুযোগও তৈরি করেছিল। কিন্তু রিয়াল বেটিস খুবই গোছানো ও দৃঢ় প্রতিরোধ গড়েছিল তাদেরকে হারানোর মতো পরিষ্কার কোনো পথ বার্সা খুঁজে পায়নি। যদিও ব্লাউগ্রানা এখনো রিয়াল মাদ্রিদের থেকে এগিয়ে আছে। তবে দিনের শুরুতে লস ব্লাঙ্কোস হেরে যাওয়ার সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি।

google Newsgoogle News

প্রথমার্ধের খেলা

বার্সেলোনা ম্যাচের শুরু থেকেই যেন ঝড় তুলে খেলতে নামে। শুরুতে তারা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং দুইটা বড় সুযোগ তৈরি করে ফেলে। প্রথমটায় পেদ্রি দূর থেকে দারুণ এক শট নেন, যেটা আটকাতে আদ্রিয়ানকে বড়সড় এক সেভ দিতে হয়। তবে এরপরের সুযোগে আর কিছু করার ছিল না গাভি দুর্দান্তভাবে গোল করে বসেন। তার আগে ফেরান টোরেসের পাসটা ছিল অসাধারণ। মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই বার্সা এগিয়ে যায়।

কিন্তু সামনে যে প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে ছিল তারা মোটেও সহজ ছিল না। রিয়াল বেটিস বেশ গোছানো একটা দল যারা ধৈর্য ধরে খেলছিল। তাদের একটা স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল, পেছন থেকে শক্ত ডিফেন্স আর গতি দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালানো। ডান দিক দিয়ে বারবার অ্যান্টনিকে ব্যবহার করে বার্সার জন্য ঝামেলা তৈরি করছিল।

এই পরিকল্পনাই কাজে দেয়। অ্যান্টনি একটা কর্নার আদায় করে নেয়। সেখান থেকে জিওভানি লো সেলসো বলটা বক্সে পাঠান। নাটান মাথা দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন।

বেটিস এরপরও থেমে থাকেনি। তারা বারবার কাউন্টার অ্যাটাকে অ্যান্টনির মাধ্যমে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছিল। যদিও তারা গোলরক্ষক ওজসিচ সেজেসনিকে তেমন বিপদে ফেলতে পারেনি। তবে বার্সাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল যেকোনো সময় আবারও আঘাত হানতে পারে।

অন্যদিকে বার্সাও চেষ্টা থামায়নি। তারা পজেশন ধরে রেখে সামনে গিয়ে প্রেস দিয়ে বেশ কিছু ভালো মুহূর্ত তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে কাজটা ঠিকঠাক শেষ করতে পারেনি। ফেরান টোরেস আর লামিন ইয়ামাল দু’জনেই সুযোগ পেয়েও ঠিকমতো ফিনিশ করতে পারেনি। ইয়ামাল সাধারণত যেভাবে খেলে সেটা দেখা যায়নি এ ম্যাচে। এক কথায় বললে, ফিনিশিংটা বার্সার খেলায় বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এই ম্যাচে।

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সুপারক্লাসিকো: লাইভ কোথায় দেখবেন?

দ্বিতীয়ার্ধে খেলা

হাফটাইমে ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আক্রমণে চিমি আভিলাকে এবং মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সের্গি আলটিমিরাকে নামান। তার এই সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছিল বেটিস যেন মন্টজুইকে জয়ের একটা বাস্তব সুযোগ খুঁজে পেয়েছে।

কিন্তু বার্সা মাঝমাঠে বলের দখল ধরে রাখায় দারুণ কাজ করে। তাদের প্রেসিং এতটাই কার্যকর ছিল যে বেটিস ঠিকঠাকভাবে আক্রমণে উঠতেই পারছিল না।

কাতালানরা একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে পেদ্রি একদম নিখুঁত একটা থ্রু বল বাড়িয়ে কাউন্দেকে দারুণ একটা সুযোগ তৈরি করে দেন। কিন্তু বেটিসের গোলরক্ষক আদ্রিয়ান সেই শট ঠেকিয়ে দেন অসাধারণ দক্ষতায়।

ম্যাচটা তখন একদম ব্যালেন্সে চলছিল। হ্যানসি ফ্লিক একটু সতেজতা আনতে এরিক গার্সিয়া ও রাফিনহাকে নামান। যেন মাঝমাঠে ও আক্রমণে নতুন গতি আসে। বার্সা তখন আবার লিড নেওয়ার জন্য মরিয়া। অন্যদিকে পেলেগ্রিনি জবাবে রক্ষণে পরিবর্তন আনেন উইলিয়াম কারভালহোকে নামিয়ে মাঝমাঠে শক্তি ও ভারসাম্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

বেটিস খুব টাইট ডিফেন্স খেলছিল। পেছনের দিকে এতটা জমাট ছিল যে বার্সার জন্য জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। বার্সা যে অল্প কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিল। সেগুলোও কাজে লাগাতে পারেনি কিছু অদ্ভুত ভুলে। ম্যাচের শেষ ২০ মিনিট বাকি তখনো ফলাফল যে কার পক্ষে যাবে বলা কঠিন ছিল। বেটিসের একগুঁয়ে ডিফেন্স বার্সাকে একেবারে ধাক্কা খাইয়ে যাচ্ছিল।

হ্যানসি ফ্লিক তখন ভাবতে শুরু করেন সামনে ডর্টমুন্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ আছে তাই আরও দুইটা পরিবর্তন আনেন। আলেজান্দ্রো বালদে আর পেদ্রির জায়গায় মাঠে নামেন জেরার্ড মার্টিন আর ফার্মিন লোপেজ। বেটিস তখন শেষ মুহূর্তে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল আদায়ের চেষ্টা করতে দুইজন ফ্রেশ ও দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড নামায়।

শেষদিকে বেটিস ফর্মেশন বদলে ৫-৪-১ করে এবং পুরো দলকেই ডিফেন্সে বসিয়ে ‘বাস পার্ক’ করে রাখে। তবুও বার্সা কিছু জায়গা খুঁজে বের করতে পেরেছিল। ফার্মিন লোপেজ শেষ ভাগে অনেক প্রাণবন্ত খেলেছেন গতি আর প্রাণচাঞ্চল্যে জমিয়ে তুলেছিলেন মাঝমাঠ। কিন্তু গোল আসেনি। বরং বার্সার সাবেক ডিফেন্ডার মার্ক বার্ত্রা যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন একটার পর একটা দারুণ ব্লক আর কাটিং করে গেছেন।

ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, যখন বার্সা গোল না পেয়ে হতাশ, তখন বেটিস বরং জয়ের আশা নিয়ে এগোতে থাকে। একাধিক কর্নার পেয়েও তারা গোল করতে পারেনি, কিন্তু তারা যেন খুশিই ছিল এই এক পয়েন্ট নিয়ে, বিশেষ করে বার্সার মতো দলের বিপক্ষে।

ভাবতেই অবাক লাগে, শিরোপার দৌড়ে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে বার্সা কীভাবে এই সুযোগ হাতছাড়া করলো। তবে এটাও মানতেই হবে বেটিস এ রাতে দুর্দান্ত খেলেছে। এমন একটা শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ড্র করাটা মোটেও খারাপ ফল নয়। তবুও, ম্যাচের শেষ ভাগে বার্সার ভুল সিদ্ধান্ত আর নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাব চোখে লেগেছে। এখন ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ভালো কিছু করতে হলে, তাদের অনেক বেশি নিখুঁত হতে হবে।

শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকেই। বার্সার হয়ে একমাত্র গোল করেন ৭ নাম্বার জার্সি গাভি। অন্যদিকে রিয়েল বেটিস হয়ে একমাত্র গোল করেন ১৭ নাম্বার জার্সি নাটান।

Scroll to Top