শেষ মুহূর্তে নাটকীয় জয় বার্সার!

শনিবার রাতে মাদ্রিদের বুটার্ক মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়ামে লেগানেসের মুখোমুখি হয়ে একেবারে ঘাম ঝরানো একটা ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। এই জয়ের ফলে অন্তত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য হলেও তারা লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে সাত পয়েন্টের লিড নিয়ে বসে গেছে।

কিন্তু খেলার মান? কাতালানরা যেভাবে খেলেছে, সেটা বলার মতো না। ওদের সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সগুলোর একটা ছিল এটা। লেগানেস ঘরের মাঠে একের পর এক চাপ দিয়ে গেছে, কয়েকবার তো মনে হচ্ছিল গোল খেয়ে বসবে বার্সা। শেষমেশ হোর্হে সায়েঞ্জ নিজেদের জালে একটা আত্মঘাতী গোল না দিলে হয়তো এই তিন পয়েন্ট বার্সেলোনার ভাগ্যে জুটতোই না।

google Newsgoogle News

ম্যচের প্রথমার্ধে

ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটটা বার্সার সাপোর্টারদের জন্য একেবারে সহ্য করার মতো না। মনে হইছে যেন ওরা অনেকদিনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খেলা খেলতেছে। মাঠে নামার পরই বোঝা গেছে বার্সার খেলোয়াড়দের মাথায় যেন কোনো প্ল্যানই ছিল না। একদম কল্পনা শক্তি শুন্য! লেগানেস তাদের ৪-৫-১ ফর্মেশন দিয়া এমনভাবে রক্ষণভাগ গুছায়া রাখছিল বার্সার খেলোয়াড়রা ঠিকমতো বল সামনে নিতে পারতেছিল না। সবকিছু গিয়া ঠেকছিল ছোট্ট লামিনে ইয়ামালের উপর।

মাঝেমধ্যে দুই একটা সুযোগ হইছিল ঠিকই কিন্তু সেগুলাও গোলের মতো কিছু হয় নাই। শটগুলা ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট  পাসগুলা আবার এমন অগোছালো মনেই হইতেছিল না ওরা বার্সা! পেদ্রি যারে আমরা সাধারণত মাঠে দেখলে শান্ত আর স্টাইলিশ একটা ছাপ পাই সে আজকে একেবারে চুপচাপ ছিল। যেন খেলায় মনই নাই।

আর লেগানেস? ওরা কিন্তু খুবই ট্যাকটিক্যাল খেলছে। ঠিক সময়ে ঠিক ফাউল দিয়া বার্সার গতি কমায়া দিছে। সুযোগ পাইলেই কাউন্টার অ্যাটাক ওদের ফরোয়ার্ড দানি রাবা দুইবার তো একেবারে গোলের মুখে নিয়া গেছিল বল। একবার তো সেভে রক্ষা, আরেকবার পোস্টের একটু বাইরে। বার্সার দুইটা সেন্টার-ব্যাকের মাথা খারাপ অবস্থা, রাবার গতি আর শরীর দিয়া ওদের একদম নাস্তানাবুদ কইরা ছাড়ছে।

প্রথমার্ধের শেষে লেগানেসই মাঠে ভালো দল ছিল। বার্সার মিডফিল্ড থেকে আসা বাজে পাস দিয়া বার বার সুযোগ নিয়েছে। তার উপর বার্সা আরও বিপদে পড়ছে। যখন ইনজুরি খাইয়া আলেজান্দ্রো বাল্ডে বাইরে গেছিল বাধ্য হয়া জেরার্ড মার্টিনরে নামাইতে হয়।

এই একেবারে দুর্বল পারফরম্যান্সে শেষ হইছে প্রথমার্ধ। বার্সা জানতো, এইখান থেইকা ম্যাচে ফিরতে হইলে খেলাটা আমূল বদলাইতে হইব।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে

হাফটাইমে গিয়া হানসি ফ্লিক একটু বুদ্ধি খাটাইলেন। রোনাল্ড আরাউজোর জায়গায় মাঠে নামাইলেন ফ্রেঙ্কি ডি জংরে, আর এরিক গার্সিয়ারে উঠায়া আনলেন যেন পেছন থেইকা বলটা ভালোভাবে উঠানো যায়।

বল ছাড়া খেলাতেও কাতালানরা আগের চাইতে অনেক বেশি ক্ষুধার্ত দেখাইতেছিল। আর এই চেঞ্জগুলা একদম সঙ্গে সঙ্গে কাজে দিছিল। জেরার্ড মার্টিন মাঝমাঠ থেইকা বলটা কাইড়া নিল। রাফিনহা ফাঁকা দেখে নিচু একটা পাস দিল লেভান্ডোস্কির দিকে। কিন্তু লেভান্ডোস্কি শট নেয়ার আগেই লেগানেসের সেন্টার-ব্যাক জর্জ সায়েঞ্জ ভুল করে বলটা নিজেদের জালেই পাঠায়া দিল। এক কথায় আত্মঘাতী গোল! বার্সা গেল এগিয়ে।

এই গোল পেয়া বার্সা যেন এক লাফে জেগে উঠল। আগের অগোছালো খেলার জায়গায় এবার দেখা গেল ঠিকমতো বল চলাফেরা, দারুণ পজিশনিং, আর লেগানেসের ডিফেন্সে ফাটল ধইরা আক্রমণ চালানো। একসময় ফার্মিন লোপেজ এমন একটা দারুণ ড্রিবল করে গোলের সামনে চলে আসলো, সবাই ভাবল ব্যস, গোল! কিন্তু শেষ মুহূর্তে শটটা একটু বাইরে মারল না হলে হয়তো ক্যারিয়ারের সেরা গোলগুলার একটাও হইতে পারত।

বার্সা তখন খেলায় ভালোই ফিরছিল। তবে লেগানেসও হাল ছাড়ার পাত্র না। ওরা একটু ধীরে খেলতে শুরু করল কয়েকটা পেনাল্টির দাবি করল, যদিও কোনোটা স্পট কিক হবার মতো ছিল না। তারপরও কিছুক্ষণ খেলার গতি কমায়া রাখল, দর্শকরাও আবার উত্তেজনায় জইরা উঠল।

ফ্লিক এরপর ফেরান টরেস আর গাভি রে নামাইলেন লেভান্ডোস্কি আর ফার্মিনের জায়গায় উদ্দেশ্য একটাই, ম্যাচ শেষ করে দেয়া। কিন্তু লেগানেস তখন আরও চাপ বাড়াইল, একটা সময় রাবা হেড করল, বলটা জালে ঢুকেও গেছিল, কিন্তু অফসাইড! না হলে তো সমতা ফিরে আসত।

পিএসএল ২০২৫ সময়সূচী

Scroll to Top